আজ : ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শনিবার প্রকাশ করা : সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২

  • কোন মন্তব্য নেই

    জায়গাটার নাম কেন ঊনকোটি

    অ্যালার্ম শুনে ধড়মড় করে উঠে বসি। জানালার বাইরে তখনো নিঃসীম আঁধার কিন্তু আমাদের হাতে একদম সময় নেই। ঝটপট রেডি হয়ে সস্ত্রীক বেরিয়ে পড়ি হোটেল থেকে।

    ভারতের আগরতলায় এসেছি দুদিন আগে। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, নীরমহল, রুদ্রসাগর, সবই ঘুরে দেখা হয়েছে। কিন্তু যার টানে এই ত্রিপুরা-ভ্রমণে ছুটে আসা, সে এখনো আছে চোখের আড়ালে। আজই হবে চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন।

    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বৃহৎ উপন্যাস প্রথম আলো পড়েছি সেই কিশোর বয়সে। একটা অংশ এখনো মনে পড়ে:

    ‘পাশেই দেয়ালের মতন যে খাড়া পাহাড়, সেদিকে তাকিয়ে দুজনেই বিস্ময়ের শব্দ করে উঠলেন। সেই পাথুরে দেয়ালের গায়ে খোদাই করা আছে একটি বিশাল মুখ। তার তিনটি চোখ, একদিকে একটি ত্রিশূল।

    মহারাজ অস্ফুট স্বরে বললেন, কালভৈরব!

    শশীভূষণ ঘোড়া থেকে নেমে চামড়ার ব্যাগ খুলে ক্যামেরা বার করলেন। এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে বললেন, আরও অনেক খোদাই করা মূর্তি আছে। ওই যে বিষ্ণু, সুদর্শন চক্র, গরুড়…

    ঝরনাটির জলধারা ক্ষীণ, হেঁটে পার হয়ে এলেন দুজনে। পাহাড়ের গায়ে দেখতে লাগলেন একের পর এক মূর্তি।

    বীরচন্দ্র বললেন, এই সেই ঊনকোটি তীর্থ!’

    অটো নিয়ে ফাঁকা শহরের রাস্তাঘাট পার হয়ে যখন আগরতলা রেলস্টেশনে এসে পৌঁছালাম, তখন সবে দিনের আলো ফুটছে। রেলস্টেশনের লম্বা সাদা দালানটাও এক দর্শনীয় স্থাপত্য। কিন্তু বাইরে বেশি সময় নষ্ট না করে, আমরা স্টেশনের ভেতরে চলে যাই। আমাদের লক্ষ্য সকাল ৬টা ১৫ মিনিটের আগরতলা-ধর্মনগর প্যাসেঞ্জার ট্রেন। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে সকাল ছয়টার আগেই নীল ট্রেনটার ভেতরের নীল সিটে বসে পড়ি।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষে মানুষে ভরে যায় রেলগাড়ি। এঁকেবেঁকে শুয়ে থাকা প্রকাণ্ড অজগর সাপটা একটু পরেই হাতির মতো তীক্ষ্ণ ডাক ছেড়ে ড্রাগনের মতো আগুনের ধোঁয়া ছেড়ে শামুকের মতো নড়েচড়ে ওঠে। কাঁটায় কাঁটায় এক্কেবারে ঠিক সময়ে ছেড়ে দিল ট্রেন। আমাদের গন্তব্য ঊনকোটি।

    ধীরে ধীরে বাইরের প্রকৃতি পাল্টে যেতে থাকে। সমভূমি আর জলাভূমি পার হয়ে পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়ি আমরা। গিরি আর গিরিখাতকে দুপাশে নিয়ে ঝমাঝম ছুটে চলেছে গাড়ি। হঠাৎ করেই পাহাড় কেটে বানানো টানেলে ঢুকে পড়ে ট্রেন। ভেতরে শুধুই ঘুটঘুটে অন্ধকার, কু ঝিকঝিক, আর গুম গুম প্রতিধ্বনি। চলার পথে এ রকম তিনটা টানেল পার হই আমরা।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *